শেখ নাসির উদ্দিন, খুলনা প্রতিনিধি: রাত পোহালেই ২০শে সেপ্টেম্বর খুলনার পাঁচ উপজেলায় ৩৪টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন। প্রথম ধাপে খুলনার এই ৩৪টি ইউনিয়নে ৩০৬টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করা হবে। মোট ১৫৬ জন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদের জন্য লড়বেন। ৩০৬টি ওয়ার্ডে মেম্বর প্রার্থী রয়েছেন এক হাজার ৪৮১ জন। সংরক্ষিত আসনে ৪৬৪জন প্রার্থী রয়েছেন। শেষ মুহূর্তে নির্বাচনী প্রচারণা ছিল বিরামহীন।
প্রার্থীরা ছুটে যান ভোটারদের নিকট। এদিকে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভোটারদের মধ্যে এক ধরনের উৎসাহ সৃষ্টি হয়েছে। সাথে সাথে তাদের মধ্যে শঙ্কাও বিরাজ করছে। ইউনিয়নগুলোতে মোট ভোটার সংখ্যা ৬ লাখ ৪০ হাজার ৭৭৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৩ লাখ ১৭ হাজার ৩৯৬ জন ও নারী ৩ লাখ ২৩ হাজার ৩৮৩ জন। প্রভাবশালীদের দফায় দফায় হামলায় মারপিট ও ভোট পরবর্তী সহিংসতার ভয়ে এজেন্ট খুঁজতে ঘর্মাক্ত অবস্থা হচ্ছে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের। একের পর এক লিখিত অভিযোগ করেও সুরাহা না পাওয়ার অভিযোগ তাদের।
এভাবে টানটান উত্তেজনার মধ্যদিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা শেষ হলো গতকাল শনিবার মধ্যরাত থেকে। আগামীকাল সোমবার, ২০ সেপ্টেম্বর খুলনার ৩৪টি ইউনিয়নে প্রথম দফায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। শনিবার দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মাইকিংয়ে প্রচার এবং রাত ১২টা পর্যন্ত সবধরনের প্রচারণার সর্বশেষ সময় ছিল। পাইকগাছার সোলাদানা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম এনামুল হক বলেন, গত তিন-চারদিন তার আত্মীয়-স্বজন, কর্মী-সমর্থকদের প্রচার- প্রচারণায় ব্যাপক বাধা সৃষ্টি করছেন ‘নৌকা’ প্রতীকের প্রার্থী ও তার লোকজন। অর্ধশতাধিক কর্মী-সমর্থককে বেধড়ক মারপিট করেছে ওরা। আমার এজেন্টদের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে হুমকি দিচ্ছে, যাতে আমার পক্ষে তারা কেন্দ্রে না যায়। এসব অভিযোগ উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপার, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে কয়েকটি অভিযোগ দাখিল করেছি। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গত ২৭ মার্চ আমাকে হত্যা চেষ্টা করা হয়েছিল, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে।
এসব কারণ উল্লেখ করে সোলাদানার প্রতিটি কেন্দ্রে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতি ও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের দাবি জানিয়েছি। তবে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক বলে দাবি করেছেন পাইকগাছা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন আহম্মেদ। তিনি বলেন, দু-এক জায়গা একটু সমস্যা ছিল, সেগুলো ঠিক করা হয়েছে। তাছাড়া পরিস্থিতি সম্পূর্ণ শান্ত ও শান্তিপূর্ণ রয়েছে। অনুরূপভাবে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর চাপের অভিযোগ তুলেছেন বটিয়াঘাটার আমীরপুর ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী খায়রুল ইসলাম খান জনি ও ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মাওলানা মেজবাহ উদ্দিন।
স্বতন্ত্র প্রার্থী জনি বলেন, কয়েকবার অতর্কিত হামলা চালিয়ে আমার অর্ধশতাধিক কর্মী-সমর্থককে মারপিট করা হয়েছে। প্রশাসনকে জানিয়েও কোন সুরাহা পায়নি। প্রচার-প্রচারণার শেষ মুহূর্তে আমার কর্মী-সমর্থক ও এজেন্টদের হুমকি দিচ্ছে প্রভাবশালীরা। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে এখনি অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কঠোর তদারকির দাবি জানিয়েছেন তিনি। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিরুদ্ধেও সন্ত্রাসী হামলা, অফিস ভাঙচুর, কর্মী-সমর্থকদের মারপিট ও ভয়-ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ উঠেছে।
দিঘলিয়ার গাজীরহাট ইউনিয়নের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী হেলাল বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী মোল্যা মফিজুল ইসলাম ঠান্ডু ও তার অনুসারীদের হামলা, অব্যাহত হুমকিতে এলাকায় ভোটারদের মাঝে ভীতির সৃষ্টি হয়েছে। প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া দেবারও অভিযোগ তুলেছেন তিনি। ইতিমধ্যে সহিংস ঘটনা ঘটেছে কয়রার দক্ষিণ বেদকাশি, পাইকগাছার সোলাদানায়, দাকোপের পানখালী ইউনিয়নে, দিঘলিয়া উপজেলার সেনহাটিতে, বটিয়াঘাটা উপজেলার আমিরপুর ইউনিয়নের সৈয়দের মোড়ে। এতে প্রার্থীসহ অর্ধশতাধিক কর্মী-সমর্থক আহত হয়েছেন।
নির্বাচনীয় সহিংসতায় একাধিক মামলা হয়েছে। জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি কেন্দ্রে পাঁচজন অস্ত্রধারী পুলিশ, ১১/১২ জন আনসার সদস্য, একজন গ্রাম পুলিশ শৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া প্রতিটি উপজেলায় চারজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমাণ দায়িত্ব পালন করবেন।
খুলনা জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা এম মাজহারুল ইসলাম বলেন, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহনের জন্য প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। নির্ধারিত সময়েই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ সামগ্রী পাঠানো হবে। দু/একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলেও সাথে সাথে তা নিরসন করা হচ্ছে। বড় ধরনের তেমন কোন ঘটনা ঘটেনি। তারপরও সার্বক্ষণিক তদারকি করছি। যদিও প্রচার-প্রচারণা শেষ হচ্ছে রাত ১২টায়। উৎসব মুখর পরিবেশে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দানে ভোটারদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন তিনি।